ঢাকা ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখন কোথায়, কিভাবে আছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অগাস্ট ২০১৭
  • ১৮১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ খুনিকে আজও দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পলাতক খুনিদের মধ্যে একজন জার্মানিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্য ৫ জন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সেনেগাল ও জিম্বাবুয়েতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি সাবেক রিসালদার মোসলেউদ্দিন খান জার্মানিতে পালিয়ে আছেন বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার পলাতক খুনি মোসলেউদ্দিন জার্মানিতে বসবাস করছেন। তবে জার্মানির কোথায় মোসলেউদ্দিন বসবাস করছেন, এ ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে তিনজন যথাক্রমে সাবেক লে. কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায়, লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন বলেও জানা গেছে।

তাদের কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক ও আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

যদিও তারা কোথায় লুকিয়ে আছে এ ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

জানা গেছে, মোসলেউদ্দিনকে শনাক্ত করতে এবং দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কাছে তার ছবি পাঠানো হয়েছে। ইন্টারপোল বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের অবস্থান জানতে আরও তথ্য চেয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নূর চৌধুরী ও মেজর বজলুল হুদা সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। বজলুল হুদার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ইতিমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। নূর চৌধুরী এখনো পলাতক রয়েছেন। অপর পলাতক আসামিদের মধ্যে সাবেক সেনা ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ভারতে পলাতক রয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো সঠিক সরকারি তথ্য নেই। অপর পলাতক আসামিরা হলেন‒বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ এবং শরিফুল হক ডালিম। ঢাকায় পররাষ্ট্র দপ্তর এর আগে পলাতক আসামিদের মধ্যে জিম্বাবুয়ে একজন বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল আজিজ পাশার স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করে।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ী হবার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে। এই কালো আইনের জন্য এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। সর্বোচ্চ আদালত আপিল ডিভিশনের রায়ের পর ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলো সাবেক লে. কর্নেল ফারুকুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) শাহরিয়ার রশীদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) ও সাবেক মেজর বজলুল হুদা। ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরের পর হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে প্রত্যাবাসন চুক্তি না হলেও সাবেক সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে দেয়।

১৯৭৫ পরবর্তী সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তারা নানা ষড়যন্ত্র ও দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় ফিরে এসে কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের পথ প্রশস্ত হয়।

খুনি লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ায় কনস্যুলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সর্বশেষ বদলি হয় টোকিওতে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে।

রিসালদার মোসলেউদ্দিনকে তেহরান ও জেদ্দায় পোস্টিং দেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম অটোয়ায় এবং লে. আব্দুল মজিদ ত্রিপোলিতে কূটনীতিক হিসেবে চাকরি পান।

লে. কর্নেল মো. আব্দুল আজিজ পাশা রোমে বাংলাদেশ মিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান। আজিজ পাশা ১৯৮০ সালের ১৭ জুন অভ্যুত্থান ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তিনি অভ্যুত্থান সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হওয়ায় সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয় তার। তাকে রোমে কূটনীতিকের চাকরি দেওয়া হয়। আজিজ পাশা নাইরোবিতেও দায়িত্ব পালন করেন। তার সর্বশেষ পোস্টিং ছিল জিম্বাবুয়েতে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পাশা জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০০১ সালের ২ জুন তিনি মারা যান।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর পাশাকে মরণোত্তর চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয় এবং তার পরিবারকে পেনশনসহ সকল সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়। তাকে চাকরি থেকে অবসর দেখানো হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখন কোথায়, কিভাবে আছে

আপডেট টাইম : ১২:০০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ খুনিকে আজও দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পলাতক খুনিদের মধ্যে একজন জার্মানিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্য ৫ জন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সেনেগাল ও জিম্বাবুয়েতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি সাবেক রিসালদার মোসলেউদ্দিন খান জার্মানিতে পালিয়ে আছেন বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার পলাতক খুনি মোসলেউদ্দিন জার্মানিতে বসবাস করছেন। তবে জার্মানির কোথায় মোসলেউদ্দিন বসবাস করছেন, এ ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে তিনজন যথাক্রমে সাবেক লে. কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায়, লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন বলেও জানা গেছে।

তাদের কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক ও আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

যদিও তারা কোথায় লুকিয়ে আছে এ ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

জানা গেছে, মোসলেউদ্দিনকে শনাক্ত করতে এবং দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কাছে তার ছবি পাঠানো হয়েছে। ইন্টারপোল বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের অবস্থান জানতে আরও তথ্য চেয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নূর চৌধুরী ও মেজর বজলুল হুদা সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। বজলুল হুদার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ইতিমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। নূর চৌধুরী এখনো পলাতক রয়েছেন। অপর পলাতক আসামিদের মধ্যে সাবেক সেনা ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ভারতে পলাতক রয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো সঠিক সরকারি তথ্য নেই। অপর পলাতক আসামিরা হলেন‒বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ এবং শরিফুল হক ডালিম। ঢাকায় পররাষ্ট্র দপ্তর এর আগে পলাতক আসামিদের মধ্যে জিম্বাবুয়ে একজন বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল আজিজ পাশার স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করে।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ী হবার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে। এই কালো আইনের জন্য এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। সর্বোচ্চ আদালত আপিল ডিভিশনের রায়ের পর ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলো সাবেক লে. কর্নেল ফারুকুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) শাহরিয়ার রশীদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) ও সাবেক মেজর বজলুল হুদা। ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরের পর হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে প্রত্যাবাসন চুক্তি না হলেও সাবেক সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে দেয়।

১৯৭৫ পরবর্তী সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তারা নানা ষড়যন্ত্র ও দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় ফিরে এসে কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের পথ প্রশস্ত হয়।

খুনি লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ায় কনস্যুলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সর্বশেষ বদলি হয় টোকিওতে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে।

রিসালদার মোসলেউদ্দিনকে তেহরান ও জেদ্দায় পোস্টিং দেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম অটোয়ায় এবং লে. আব্দুল মজিদ ত্রিপোলিতে কূটনীতিক হিসেবে চাকরি পান।

লে. কর্নেল মো. আব্দুল আজিজ পাশা রোমে বাংলাদেশ মিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান। আজিজ পাশা ১৯৮০ সালের ১৭ জুন অভ্যুত্থান ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তিনি অভ্যুত্থান সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হওয়ায় সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয় তার। তাকে রোমে কূটনীতিকের চাকরি দেওয়া হয়। আজিজ পাশা নাইরোবিতেও দায়িত্ব পালন করেন। তার সর্বশেষ পোস্টিং ছিল জিম্বাবুয়েতে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পাশা জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০০১ সালের ২ জুন তিনি মারা যান।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর পাশাকে মরণোত্তর চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয় এবং তার পরিবারকে পেনশনসহ সকল সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়। তাকে চাকরি থেকে অবসর দেখানো হয়।